মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০১১

বিপদের নাম-গন্ধ


০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৪:১৩



তৃতিয় বিশ্বযুদ্ধ হবে পানির জন্যে - এই বহুলচর্চিত তত্বটি আমি প্রথম জানতে পারি বিয়ের পরে। আমার বউয়ের সাথে যখন আমি গাটছাট বাধি তখন চারিদিকে ভয়াবহ ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছিলো। সরকার-সুশিল সমাজ-গণমাধ্যম সবাই ডেঙ্গু মশার আতংকে অতিষ্ঠ হয়ে এর থেকে মুক্তি পাবার জন্যে বিবিধ ধরণের প্রচারণা চালাচ্ছিল। তাতে কাজ কতোটুকু হচ্ছিল বোঝা যাচ্ছিল না, তবে এই তান্ডবে বাড়ির আশেপাশের বহুদিন ধরে অযত্নে লালিত সব জঙ্গল-ডোবা-নালা পরিষ্কার হয়ে গেল এবং পরিষ্কার ডোবাগুলো - যেগুলো অযত্ন অবহেলার দরুন সকলের চোখের সামনে থেকেও অদৃশ্য ছিল, পরিষ্কার করার পরে সকলের দৃষ্টি গোচর হলে তার দখল নিয়ে পাড়ার ছেলেদের সাথে বেপাড়ার ছেলেদের প্রতিদিন গন্ডোগোল-মারামারি হতে থাকলো। জাদু শিল্পী জুয়েল আইচের একমাত্র কন্যা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রন্ত হলে তার পরিচিত জনেরা চিন্তিত হয়ে পড়লো, কারণ জুয়েল আইচ-বিপাশা দম্পতি উচু ফ্লাট বাড়িতে থাকতেন - যার আশেপাশে কংক্রিটের জঙ্গল ছাড়া অন্য কোন জঙ্গল ছিল না, কয়েকজনের বাড়ির ছাদের বিলাসী সুইমিং পুল ব্যাতিত উল্লেখযোগ্য কোন জলাধার ছিল না। আর এগুলোর মালিকেরা সবাই আইচ-বিপাসা দম্পতির চেয়ে ক্ষমতাবান হওয়ায় এগুলোর উপরে দোষও চাপানো সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে ডেঙ্গু মশার উপরে রাগ ঝাড়বার জন্যে তারা এবং তার পরিচিত জনেরা কোন উপায় খুজে পাচ্ছিল না। এরকম একটা অচলাবস্থায় অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ তার উদ্ভাবনী মস্তিষ্ক ব্যাবহার করে নতুন একটা তত্ত্ব দিলেন - ডেঙ্গু মশা শুধুমাত্র ঝোড়-জঙ্গল আর ডোবা-নালাতেই বংশ বিস্তার করে না বরং বাড়ির বাথরুমে, বারান্দা/ছাদের ফুলের টবে, পানির ট্যাংকিতে কয়েকদিন ধরে পানি জমে থাকলে সেখানেও ডেঙ্গু মশা তার বংশ বিস্তারের নিমিত্তে ঘাটি গাড়তে পারে। তাই তিনি তার সমস্ত সচেতন শিষ্য বৃন্দের মাধ্যমে বহুতলা বাড়িতে বসবাসরত নাগরিকদের কাছে বার্তা পৌছে দিতে থাকলেন -আপনার বাড়ির বাথরুম এবং রান্নারুমের যে সকল পাত্রে বেশ কয়েকদিন পানি জমে থাকার সম্ভাবনা আছে সেগুলো নিয়মিত পানিশুন্য করে শুকনা খটখটে রাখুন, বারান্দা বা ছাদের ফুলের টবে নিয়মিত মশার ওষুধ স্প্রে করুন (সম্ভব হলে সমূলে উৎখাত করুন), আর লক্ষ রাখুন ভাঙ্গা টব বা বালতিতে যেন পানি জমে না থাকে। তো এরকম একটা প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আরো অনেকের মতোন একদা আব্দুল্লাহ্ আবু সাঈদের শিষ্য হিসেবে আমিও বাড়িতে সকল পানির পাত্রকে, ফুলের টবকে পানিশুন্য রাখার অভিযানে সামিল হয়েছিলাম। যদিও ততোদিনে আমার বসবাস চাকুরিসূত্রে ঢাকা থেকে অনেক দুরের এক মফস্বলে সরে এসেছে - যেখানে বহুতল ভবন বলতে হাতেগোনা কয়েকটা ৪ তলা, বাকি সব বাড়িই একতলা/দুইতলা অথবা টিনশেডের। প্রতিটি বাড়ির অন্তত একপাশে একখান করে নিবিড় আগাছার জঙ্গল বাধ্যতামূলক - যেখানে বাড়ির বাসিন্দারা ময়লা আবর্জনা ফেলে। তা সত্ত্বেও সংবাদ-পত্রের নিবন্ধ এবং খবর পরে, এক সময়ের সহযাত্রীদের কর্মকান্ডের বিবরণ শুনে ( ফোনে ) আমিও এই মহত কর্মকান্ড থেকে নিজেকে দুরে রাখতে পারি নাই। ঢাকা শহরের বাসিন্দা বন্ধুদের অনুকরণে আমিও বাড়ির ভেতরের ডেঙ্গু মশার আবাস উচ্ছেদে ঝাপিয়ে পরেছিলাম। এমন কি আমার বারান্দায় রাখা গোটা’দশেক ফুলের টবকে পানিশুন্য রাখতে রাখতে এক সময় যখন গাছগুলো মরে গেল, তখনো আমি এই উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে আসিনি। বরং টবগুলোকে ফুলগাছ শুন্য করে বারান্দায় রেখে দিলাম (গাছে পানি দেওয়ার ঝামেলা থেকে বাঁচলাম)। তবে আমার ঢাকাবাসী বন্ধুরা যেহেতু বাড়ির পেছনে জঙ্গল পরিষ্কারের কোন কর্মসূচী নেয়নি (নেবে কিভাবে ? জঙ্গল থাকলেতো...) তাই আমিও আমার বাড়ির তিনপাশের জঙ্গল পরিষ্কারের বিষয়ে কিছুই করি নাই।

এ রকম একটা সময়ে পরিবারের সবার সম্মতিতে আমি আমার বউকে বিয়ে করে ঘরে তুললাম। আমার বউ ছিল আজন্ম ঢাকাবাসী। বিয়ের পরে প্রথম সে ঢাকার বাইরে আসলো, তাও আবার থাকার জন্যে। মফস্বল শহরে কি কি পাওয়া যায় কি কি পাওয়া যায় না, জীবনটা কেমন, কি কি সংকট হইতে পারে, কোন সংকটে কার শরণ নিলে উদ্ধারের রাস্তা পাওয়া যাবে.... রওনা হওয়ার আগে বেশ অনেক দিন ধরেই সে এই সব বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছে এবং প্রয়োজনীয় জনসংযোগ সেরেছে। এই মফস্বল যাত্রা তার জন্যে একটা চ্যালেঞ্জও আছিল, কারণ সবাই বলছিল সে টিকতে পারবে না। তো এই ব্যাপক প্রস্তুতি যজ্ঞের শেষে সত্যি সত্যিই যখন সে মফস্বলে আইসা পৌছাইলো এবং কিছুদিন বসবাস করলো, তখন তার ভেতরে আস্তে আস্তে হতাসা তৈরী হইতে লাগলো। কারণ মফস্বলবাসের বিপদ মোকাবেলার জন্যে যাত্রাশুরুর আগে নেওয়া তার সকল প্রস্তুতিই জলে ডুবে গেল, আক্ষরিক অর্থেই। কারণ মফস্বলে এসে বসবাস শুরু করার অনেক দিন পরেও তার সংসারে বা জীবনে কোন সংকট আসলো না, সে কোন বিপদের সম্মুখিন হইলো না। এমন কি একটা ছোটখাটো চুরির ঘটনা পর্যন্ত ঘটলো না তার ঘরে। এই বৈচিত্র এবং বিপদহীন সময় মানুষ ক্যামনে পার করে তখন সে তাই ভাবতে বসলো।

আর ঠিক সেই সময়ে চরম গ্রীষ্মকালের সূচনা হলো।

তলপেটের নিরাপদ আশ্রয় থেকে ছিটকে পরার পরে অথবা একটা এ্যবারেশনের গল্প অথবা খোলস থেকে টুক করে মাথা বের করেই দেখে ফেলেছি




তখন আমি মগ্ন ছিলাম ধ্যানে...সাধনায়...আমি তখন গৌতম হয়ে যাচ্ছি নির্বাণে... এ রকম দিনগুলোর একদিনে শুন্য নিয়ে ছিলাম...শুন্যে। যেহেতু সবকিছুই শুন্য থেকে শুরু করতে হয়, শুন্যে বিলিন হয়ে যায় সবকিছু , মাথাশুন্য না হলে জ্ঞানী হওয়া যায় না...যেহেতু সবকিছুর শুরু শুন্য থেকে হয়... যেমন জ্ঞানকান্ড, কোন দৈবের বলে শরীর বৃক্ষে পাঁচটা ডাল গজিয়ে ওঠে শুন্য থেকে। তো সাধনার কৌশলে কতোদিন কতোরাত কতো কতো পাহার গলিয়ে বাষ্প করে নিয়েছি প্রয়োজনে, শুন্যের- পুরোটা মানুষ, পুরোটা শরীর বৃক্ষের পাঁচখানা ডাল ছেটে শুন্য করতে, শরীর বৃদ্ধির প্রয়োজনে।

"জানো, এখোনো মাঝে মাঝে তলপেটটাতে চিনচিন ব্যাথা হয়, তলপেটে চিনচিন ব্যাথাটা, অনুভূতিটা ফিরে ফিরে আসলেই তোমার কথা মনে পরে যায়। এখন নিশ্চয় সুখে আছো নতুন সংসার-ঘর-গৃহস্থলি-পুত্র-পরিবারার নিয়ে। এ মাসেইতো তোমার মেয়েটার বয়স ১ বছর হবে...১ বছর যোগ ১ বছর = ২ বছর...দুই বছর !" - এ টুকু পড়েই থমকে দাড়ালাম, ব্রেক করে...প্রেরক ও প্রাপকের নামহীন, সম্বোধন শুন্য চিঠি আমি এর আগে দেখিশুনি নাই। তবে হাতের লেখাটা দেখে বোঝা যাচ্ছে আমার বউ অথবা কন্যার ভেতরে একজন শুন্যের বরাবর চিঠিটি সাজিয়েছে প্রাক্তন কারো স্মৃতির বেদিতে...২২ পৃষ্ঠায় ভরে। যেহেতু দু'জনের একজন অন্যের কার্বণ কপি চোখ-চুল-চেহারাছবি থেকে হাতের লেখা পর্যন্ত...আহ্ কি সুন্দর হাতের লেখা ! গোটাগোটা করে যত্ন নিয়ে লেখে দু'জনই...সনাক্ত করা গেল না কে কাকে লিখেছে !!!

এর বেশি দেখা প্রথামতে অনুচিত, যখন আমি জেনে গেছি এই বিষয়টা ব্যাক্তিগত-একজনের একান্ত একার বিষয়। তাই চিলেকোঠায় প্রকাশ্যে রাখা বাক্সের গোপনে রাখা চিঠিটা অসাবধানে আমার হাতে পরলেও এর বেশি না পড়েই রেখে দিয়েছি জায়গায়। তারপরে ভুলে থাকতে চাইছি দেখে ফ্যালাটা।

চোখের দেখা, কানের শোনা ভুলওতো হইতে পারে (নির্বাণ বলেছেন)।

তারপরে থেকে ভাবনা গুলো-চিন্তাগুলো-সন্দেহগুলো-চুড়ান্ত মানবীয় পাপের ছবিগুলো ভীড় করে ঢুকে পড়তে চাইছে, একটু চ্যাতন হলেই, আমার ভেতরে, শুন্যে

তারপরে থেকে শুন্য থাকতে পারছি কই, ধোয়াতে আগুন জ্বেলেও